বিস্বাদ (বিষাদ) উপসংহার: রাহেবুল
মরণরে তুঁহুঁ মম...
এসব তোমার মৃত্যুর কিঞ্চিৎ পূর্বেকার ব্যাপার কিনা, এখোন আর আমার বিশদে মনে
নেই ঠিক। বা আমার মৃত্যুর আগেকার কিনা। আমাদের মৃত্যুদিবসটা কি তোর মনে পড়ে?
আমার তো ভীষণ ভুলোমন। তদন্ত কমিশন হয়েছিল না একটা? যেমন ঘটা কোনো রেল দুর্ঘটনারই তো তদন্ত বাদ পড়েনা, একটা তদন্ত
হয়ই যে-কোনো সুনীতিলঙ্ঘন অভিযোগের, রিপোর্ট হয়না সবগুলার। বা তৎপরবর্তী ব্যবস্থা।
হয়তো পূর্বাবস্থার স্বার্থে, মিল রক্ষার্থে...
কীসের মৃত্যু ছিল সেটা? সম্মানরক্ষার খুন? অবৈধ সম্পর্ক? ‘মানা যায়না’
সম্পর্ক? সম্পর্কহীন সম্পর্ক? অথবা সরকার বেসরকারের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্রের
অভিযোগ? না সরাসরি কোনো আত্মহননের কারোবার? যার নেপথ্যে কোনো অ-মানুষ?
আমরা কি সত্যি
সেদিন মারা পড়েছিলাম? একত্রে একসাথে? আমরা তো আত্ম-নিয়ন্ত্রণের অধিকারে বিশ্বাসী
ছিলাম। আলাদা করে আমরা দুজনেই একাকে ভালোবাসতাম। সে নিয়ে কারো কোনো নালিশ ছিলনা।
ফোনে আমাদের প্রায়ই দীর্ঘ আলাপ হত, sms-এ
চিঠি। সবেরই নির্বাক ভাষা। কখনো স্বগত সংলাপে। মেঘ পাঠানোর রেওয়াজটাতেও অনভ্যস্ত ছিলাম
না। তারমধ্যেই হঠাৎ কোনোদিন এনগেজড কল, আমরা বুঝতাম আজ একার সাথে এখোন কথা হচ্ছে। আমাদের
শূন্যতার যা প্রাচুর্য, আমরা মিটিয়ে নিতাম ওদিন। রক্তে আমাদের কিছু অবশ্যম্ভাবি আদি
ও আধুনিক কবিতা ছিল মনেহয়।
আমাদের কি বিয়ে হয়েছিল কোনোরাত?
সামাজিক? লিভ টুগেদার ছিল নাকি? কল্মা বা মন্ত্রপাঠ? কেমন ছিল আমাদের প্রথম আলাপ?
তাতে পিরিতি ছিল না প্রেম? ব্যক্তিগত সম্পর্ক আমাদের কেমন ধরন? মানসিক আর শারীরিক?
রাতের বিছানা-পরবটা ভাব … রাত্রি উদযাপনগুলো? কে ওপরে যেত বিছানায়? আমরা কি দুজনেই
লেসবিয়ান ছিলাম? গে কোনো? নারী পুরুষ এসব আজকে আমার মনে নেই ঠিক। তোর আমার সাক্ষাৎ
কি ঐ রং নাম্বারেই? ফেসবুকে পরিচয়? তোর খেয়াল আছে?
আমরা কী অদ্যাবধি মৃত? আমরা
আসলে অনেকটা এগিয়েছিলাম। অথবা বহু বহু দূর পিছিয়ে। ভাব তুই তোর ধর্ম পরিচয়, জন্ম পরিচয়,
মিল আমাদের ছিল অনেকটাতেই। এমনকি বোধয় মৃত্যু পরিচয়েও। আমরা এসব নিয়ে ভাবতাম না, আমরা
ভাবতে চাইতাম, ভাবতাম—আমাদের মানুষ-জন্মের ও মানুষ-মৃত্যুর সার্থকতা শুধু। যদি সত্যিই
আমরা মানুষ হয়ে থাকি।
আমরা আসলে মানুষ ছিলাম। সময়
দেখেছিল মানুষেরই প্রশিক্ষিত হাতে আমাদের কীরকম খুন হতে। সময় কি সেদিন দ্বিচারিতা করেছিল?
টাকা খেয়েছিল? অথবা মাননীয় বিচারক? আমরা আসলে মানুষ ছিলাম না কোনোদিন। আমরা খুন হতে
পারিনা, হইনা। মৃত্যু হয়না আমাদের মেরে ফেললেও। হয়তো জন্মও হয়না।
প্রেম হয় আমাদের, প্রেমিক
প্রেমিকা হয়না। আরও অনেক কিছুই হয়না। মানুষের মৃত্যু পারে আমাদের মিলন জুড়তে, অ-সমাপ্ত
যে মিলন আমাদের। সমাজ ও সময় মানুষের, একই কবরে একই শরীরে আমাদের রক্তাক্ত করে। ইত্যাকার
ঈশ্বর-কণা বা পরমাণু-কণা কারোরই খোঁজে যাইনি আমরা কোনোদিন। অরিজিনালিও আমরা মৃত্যুবিলাসী
ছিলাম… কেমন একটা তাগাদা, সেই শেষ বা শুরু, সেখানে পৌঁছাবার…
[প্রকাশিত : ইবলিশ,
২০১২ যিশু অব্দ]
ভালো লেখা
ReplyDeleteপড়া এবং প্রতিক্রিয়া জানানো, উভয়ের জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই...
Delete