Saturday, December 25, 2021

‘ব্লিডিং বরষে হৃদি’র পাঠ প্রতিক্রিয়ায় কবি কৌশিক সেন

 

‘ব্লিডিং বরষে হৃদি’র পাঠ প্রতিক্রিয়া— কৌশিক সেন

“সকলই বোধয় ফ্যান্টাসি...

হৃদি বরষে।  ব্লিডিং বরষে।  বরষে যায়...


স্বপন জাল বুনে, যথা মাকড়সার জাল...”


জাল বোনেন কবি রাহেবুল।  সূত্র গেঁথে তোলেন, তাঁর প্রথম কাব্যি “মদীয় ফ্যান্টাসি” ও দ্বিতীয় কাব্যি “ব্লিডিং বরষে হৃদি”র ভেতর।  বিনিসুতোয় এর বিচিত্র মালা গাঁথেন কবি।  অলৌকিক প্রক্রিয়ায় “চুঁয়ে চুঁয়ে শরীর-মন-বোধ-বুদ্ধি-সত্তা থেকে নির্গত হয়ে চলে টক্সিসিটি, কবিতা।”


অবশ্য কবি না লিখলে কি সূত্র খুঁজে পাবেননা পাঠকেরা।  শ্রীমান রাহেবুলের একনিষ্ঠ পাঠকমাত্রই সহজে অনুধাবন করতে পারবেন এই যোগসূত্র।  অপেক্ষা ছিলই প্রায় দেড় বছর ধরে, এই কাব্যির জন্যে।

আসলে কবি সোজা পথে চলেন না কখনই।  নাকি একটু বেশীই সোজা পথে চলেন! শব্দপ্রয়োগে ও ভাবনায় গড়নে পেটনে ভাঙচুর করা ওনার কলমজাত।  কোনো পাঠক হঠাৎ করে পড়তে এলে হোঁচট খাওয়া অবশ্যম্ভাবী।


চেনা ফরম্যাটকে হাতের তালুতে গুঁড়ো গুঁড়ো করাই যদি রাহেবুলের ভবিতব্য হয়ে থাকে, তবে তা আলবত করেছেন উনি।  বেশ করেছেন।  আমরা পাঠকরা এঞ্জয় করি কবির কলম,

 “চাঁদনি রাতি গো।

 চামচিকা সকল বেরিয়েছে প্রণয়ে

 ওয়েলিং জুড়ে ভ্যাম্পায়াররাজ।”

যতিচিহ্ন ব্যাবহারে অভিনবত্ব লক্ষণীয় গত কাব্যি থেকেই।  একটু বেশীই তীব্র করে তোলে কি লেখনীকে!

 “কে ঝুলিয়েছে এইসব দড়ি?

 উচিত ছিল: তাঁর কথাই রাষ্ট্র হওয়া।”

 অথবা

 “সকল কাফেলা ডিম্বের খোঁজে,

 কিংবা যেমতি পালটি খেলে মুখ বা মুখপাত্র: ডিম্ব কারে খোঁজে?”


রাহেবুল তাঁর রচনাকাল নির্ধারণ করেছেন শুরুতেই।  একটা প্রবাহে পড়ে গেলে কিন্তু রচনাকাল গৌণ হয়ে যায়।  কবির কলমে সে দম আছে বৈকি!

তীব্রতা আরও তীব্রতর হয় উপসংহারে। “বধ্যভূমিতে বসে বাধ্য হয়ে” লিখে যাওয়া কবি গদ্য ভাষায় লেখেন, “ইত্যাকার ঈশ্বরকণা বা পরমাণুকণা কারোরই খোঁজে যাইনি আমি কোনোদিন।  অরিজিনালিও আমরা মৃত্যুবিলাসী ছিলাম... কেমন একটা তাগাদা, সেই শেষ বা শুরু, সেখানে পৌঁছোবার...”


শেষ হয়ে হইলনা শেষ: কেন লিখি।  এক অনবদ্য জবানবন্দী।  অবলীলায় লেখেন রাহেবুল, “এই বিগ বিগ ব্যাং-হরিণী-গরু-গিরগিটি-বেজি-ছুঁচোর মেহফিলে নূতন হই, উপজাই, লয় হয়, ক্ষয় হয়।  প্রক্রিয়াটির নাম কবিতা।  গিনিপিগটি আমি।  হতে হতে স্বয়ং কবিতা হই। আর অহং কবি হয়।” 


বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: যেসব পাঠক কবিতাকে অচলায়তনের মত এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে চান, তাঁদের এই বইটি না পড়াই ভালো!

শ্রীমান রাহেবুলের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।


গ্রন্থ: ব্লিডিং বরষে হৃদি

প্রকাশক: শাঙ্খিক

প্রচ্ছদ: কৃষ্ণেন্দু নাগ

মূল্য: 80 টাকা 

যোগাযোগ: +9195474 58178

No comments:

Post a Comment