Sunday, January 30, 2022

শীত কিংবা শীতের সংলাপ: রাহেবুলের সৃষ্টি শুধু খেজুররস নয়—নীলাদ্রি দেব

রাহেবুলের কবিতা নিয়ে বিশেষত সদ্য প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্যি 'ব্লিডিং বরষে হৃদি' নিয়ে তরুণ কবি নীলাদ্রি দেব এই শীতের মরশুমে যে-মতন কাতর হলেন... 

শীত কিংবা শীতের সংলাপ: রাহেবুলের সৃষ্টি শুধু খেজুররস নয়—নীলাদ্রি দেব 

এটা কোনো পাঠপ্রতিক্রিয়া নয়. ভালো/মন্দ লাগা জানানো নয়. একটা শীত কতটা শীত দিল/ দিচ্ছে, ততটা বলার চেষ্টা. অতএব কোনো গদ নেই. আর আঠা না থাকলে কী করে পাশাপাশি লেগে থাকবে শব্দগুলো, এই অআকখ থেকে দূরে রাহেবুলের লেখার জলাশয়ে ঢিল ছুঁড়ে দিই. ঢিলের শব্দ আর জলাশয়ের গভীরতা সম্পর্কযুক্ত. এবারে মনে হবে, সাগর না বলে নদী না বলে এ তল্লাটকে সামান্য জলাশয় কেন বললাম. আসলে সামান্য হওয়াটা সহজ নয়. যতি নয়, ভাষা নয়, সূত্র নয়, সমস্যা সমাধানের ঐকিক নয়... রাহেবুলের লেখা বিন্দুর গড়িয়ে যাবার মতো. বিন্দুই রেখা হয়ে ওঠে. সরল? কোনো মনোটনি নেই. অথচ 'ওনার গুরুত্বপূর্ণ পংক্তিগুলো নিম্নরূপ-' বলার অবকাশ নেই. কবিতার ভেতরে অসংখ্য কবিতা, অসংখ্য কবিতা ঘিরে একটিই কবিতা, কবিতা তো সমস্ত জীবন... এসবের সমান্তরালে যে আলপথ, তার কোলে বসে রাহেবুল. ওকে পাঠ করা শ্রমসাপেক্ষ. গতকাল ও আজ = আজ, এটা ওকে পাঠের মূল শর্ত মনে হয়. মদীয় ফ্যান্টাসির রাহেবুল, ব্লিডিং বরষে হৃদির রাহেবুল কবিতাগদ্যছবি/ 'সঙ্গে কতেক ছাইপাঁশ' বলতে কী বোঝেন, আপাতত তাঁর জিম্মায়. জার্নি জারি. এটা শেষ শব্দ.

প্রচ্ছদ সুন্দর. প্রোডাকশনও. সাজানোগোছানো. তবে, কেত ও কায়দাবাজি আছে. শাস্ত্রীয় নাকি লোকজ, এসবে যাবেন না. এতো সব অপশন আছে বলেই তো গণতন্ত্র.

 

ব্লিডিং বরষে হৃদি

রাহেবুল

শাঙ্খিক

আশি টাকা

Sunday, January 16, 2022

সাধো

সারাদিন এইসব দ্রষ্টব্যে উঁকিঝুঁকির পর, ক্যামেরায় দু'একটাকে স্থিতি দেবার পর... ঘরে ফিরে মনে পড়ে, বা মাথায় আসে যা... 'মদীয় ফ্যান্টাসি' থেকে সেই 'সাধো'—


💀🛶🌃🕸️🔛


একটা ঠ্যাং কবরে, তাহে কী? সাঁঝদিগন্তে পাখনা মেলিছে সাধো। 




Saturday, January 15, 2022

ব্লিডিং বরষে



শুয়ে শুয়ে পাতা ওল্টাচ্ছিলাম 'ব্লিডিং বরষে'র। নিজের লেখাজোখা, বর্তা-মরার এটা একটা মুখব্যাদান। ঠিক এর পরে ছিল 'কেন লিখি' সেই ফিরিস্তি। ঠিক তার আগে ছিল, ২০০০-এর বারোটা যখন বেজেছিল সেই ছটফটানি, তার আগে ছিল ২০০০বিষ-এর কবিতা তিনটে, না চারটে। তারও আগে কবেকার ২০১৯ এক, কত উল্লম্ফন, কবিতা কওয়া যায় বা যায় না। আর তারও আগে ছিল (আছে) মদীয় ফ্যান্টাসি, দেখতে পাই।   



গানও শুনছিলাম অবশ্য, এমন এক শিল্পীর, ইউটিউবে, একটাও লাইক নেই, ভিউ চারটা কী পাঁচটা কিন্তু হ্যাঁ তাকে আমি চিনি, 'বারুদ' বলে একটা গান তার অনেক শুনেছি একদা।

Thursday, January 13, 2022

ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান।

|| 'ব্লিডিং বরষে হৃদি'র পাঠ-প্রতিক্রিয়া। কথায় কবি ওয়াহিদার হোসেন ||

ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান। 



ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান। বমিসম্ভুত এক কাব্য। অনর্গল বিষাদ গলাধঃকরণের যেন ফলাফল এই কবিতা সমূহ রাশি। উৎসর্গ করা হয়েছে রু কে তিনি রা নামের সূয্যি দেবের কন্যা, স্ত্রী ফারহানা মানে আনন্দময়ী আর শেফালী এবং চৈতি। উৎসর্গ পত্রেও চূড়ান্ত রকমের ব্যতিক্রমী উদযাপন। হুবহু পড়তে গেলে বইটি কিনে পড়তে হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই এই বই ব্যতিক্রমী তাই স্বাদে মানে স্বোয়াদে একদম রাহেবুলীয় এক গাথা।

 

কবিতাগুলি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছে। ‘ঘূর্ণন দেখছি’র শেষ টা এখানে শুরু হয়েছে। সে এক বিজ্ঞাপন আগামী কাব্যির। কবিতাগুলি দু’হাজার উনিশের লেখা।

দ্বিতীয় কবিতা— ‘এইভাবে/এই ভবে/ব্ল্যার/ব্লেডজ কুসুম’

(এই বই পড়ুন ব্লেডজ কুসুম) ভুল করবেন না ‘ক্লেদজ কুসুম’ বলে। ইনি বোদলেয়ার নন আমাদের প্রিয় কবি যিনি প্রথম কবিতায় আমাদের রক্তাক্ত করেন দুমুখি ধারালো এক ব্লেডে।

দুই প্রেমিক প্রেমিকা অনুহ্য থেকেছে। তাদের সংলাপ বিরচিত হয়েছে। কি অসাধারণ কাব্যগুণ—

ঘুম হয়েছে?

না।

ঘুম হয়েছে?

না।

ঘুম হয়েছে কাল?

না।

ঘুমিয়েছ কাল?

ততটা ভালো নয়।”

এরপর চলতেই থাকে দীর্ঘ কবিতাটি।

সাদা পরির সম্মোহন

 

অথবা

 

সেক্সচ্যাট

 

অথবা

 

ব্লেডজ মায়া”

এই হচ্ছে রাহেবুলীয় প্রেমের সংজ্ঞা। যেখানে প্রেম নিয়ে কবিকল্পনা নেই। ঝর্ণা নেই। আছে শুধু শরীরি উত্তাপ আর চূড়ান্ত ভোগবাদী এক প্রজন্মের তুমুল সেক্সচ্যাট। যা স্বাভাবিক। রিয়েল এক পৃথিবীর ছবি তুলে ধরে যেখানে ভোর নেই শুধু ঘুমহীন অনন্তরাত।

একসময় রাষ্ট্র সমাজের পচন উঠে আসে কবি নিশ্চিন্ত স্বাভাবিক উচ্চারণ করেন—

খাপ বসেছে ঘুমের নৈরাজ্যে। ঘুমের বীচিগুলান কেমন আমাছামা লাগে...কেমন ব্ল্যার… কীসব টক্সিসিটি, একসময় নিন্দালু হই।”

ক্লান্ত হতে হতেও কবি আমাদের শেষ ক’টি লাইনে আমাদের সমাজ সভ্যতার ‘ব্ল্যার’ ‘আমাছামা’ অংশটি তুলে ধরে আমাদের নিয়তি দেখিয়ে দেন অথবা সময়সচেতন কবি এখানেই নিস্তব্ধতার গান ফাঁদেন—

ডাংঘড়ির কাটা যেন।

বলে-

পাগলা গারদে কবে যাবি?”

 

ভাষা, শব্দ নির্বাচনে কবি নির্মোহ। দেশীয় রাজবংশী শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করেছেন। কবির তির্যক প্রতিবাদ সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতার সীমানাও পেরিয়ে গেছে। সমগ্র মানব সমাজ মানচিত্র হয়ে উঠেছে ব্যঙ্গের বিষাদের লক্ষ্যস্থ্ল এবং কারণ—

উলঙ্গরা রাজা, রাজপাট তাহাদের।”

আবার অন্য কবিতায়—

ডান্ডায় বাধা ঝাণ্ডাগুলান সমস্বরে বলে উঠলো: ইনকিলাব

কতেক রামাল্লাহ্‌ আগের মতোই বোবাকালাকানা রহিলেন

পাড়ার গুণ্ডা শুধালো: বাঞ্চোত! শাসকই সময়!”

 

শব্দের স্ফুরণ। অগ্নি। যা ক্রমাগত জ্বালিয়ে গেছে আমাকে। কবিতা পড়তে পড়তে বইটা বহুবার বন্ধ করে বুঝেছি এ আসলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনা করার মতো যে এখুনি হয়তো বাথরুম থেকে ফিরে এসে নিজের ধোওয়া আধাধোওয়া প্রত্যেক্টি অংশ পচন দেখতে পাচ্ছে তাকে তুলে ধরছে শব্দ বাক্য কখনো নৈশব্দ্যঃ কখনো আবার স্পেসের মাধ্যমে। বস এই কবিতাগুলি পড়তে গেলে সাহস লাগবে। আর হ্যাঁ এই কবিতা হয় রাস্তায় পাগলের মতো দাঁড়িয়ে থুতু ছিটিয়ে সমাজ সভ্যতার ধর্মের গায় পাঠ করতে পারেন, হবে নতুবা চুপ করে আত্মস্থবির হয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য এই বইয়ে আরও দু’টো গদ্য রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আরও দীর্ঘ পরিসরের প্রয়োজন। আর হ্যাঁ বইটি বুকসেল্ফে রাখার জন্য নয়। যারা ব্যাতিক্রমী লেখা পড়েন তারা অবশ্যই সংগ্রহ করুন। আর হ্যাঁ বইটি আমাদের উপহার দিয়েছেন প্রকাশক আমাদেরই ভাইবেরাদর সুকান্ত দাস।

 

কবিতার প্রচ্ছদ খুব সুন্দর। করেছেন কৃষ্ণেন্দু নাগ।

প্রচ্ছদের রূপটান সুপ্রসন্ন কুণ্ডুর।

মূল্য আশি টাকা।

প্রকাশক শাঙ্খিক।

 


Tuesday, January 4, 2022

একা আর একক হই

কিছু মানুষকে দেখে প্রথমে হাসি পায়, কখনও কষ্টও পায় খানিক পরে। সবচেয়ে বড়ো যাতনা হলো এগুলো কোথাও বলবার নেই, শোনার কেউ নেই তো। আর শুনলেও বুঝবে তো? জানি না একদিন বেটি রু কেমন হবে বোধে। লেখাজোখায় বা আঁকিবুঁকিতে দৈবাৎ যখন ফিল্টার হয়ে আসে এইসব, তারাও ঠিকই আমার মতন একা আর একক হয়ে ওঠে। এ ধারণা এমনি এমনি নয়। এজন্যও অবশ্য সেই পড়ে থাকে আমাকে পড়াটুকু। কষ্ট কে করবে? কেন করবে? 'ইবলিশ'-এর মতন অনামা-অনিয়মিত পত্রিকা কেন পড়বে কেউ? কেন পড়বে 'মদীয় ফ্যান্টাসি' বা 'ব্লিডিং বরষে' বা 'ঘূর্ণন দেখছি'? কেননা এরা একা ও একক। 



Saturday, January 1, 2022

রাহেবুলের গদ্য...

দুপুর বেলা ঘাসের ওপর শুয়ে শুয়ে তখন। মাথার ওপর একটা চিল ঘুরপাক খাচ্ছিল, শকুনের ন্যায়। মোবাইল তাক করতে তিনি ছবিতে ধরা দিলেন। এবং আমার মনে পড়ল 'যেদিনকে ডানা আর ডুবুরি' গদ্যটার কথা। তারই অংশবিশেষ পাঠক সমীপে।

 

চিলার উড়ান

*********

 

...... আব্বাকে ছোটবেলায় কে নাকি শিখিয়ে দিয়েছিল ‘চিলার উড়ান’। কীভাবে নিজেই চিল হওয়া যায়, ডানা গজিয়ে নিতে হয়, ডানা বেঁধে উড়তে হয় শিখিয়েছিল। বাবা শেখেনি ভালো মতন। ঠকে শেখেনি। ঠকবার গল্প তবু বাবা জানত, বলেছিল। উড়বার তাড়না বাবার একার তো নয়, অনেকের ছিল, থাকে। আজও অমনই আছে দিন বদলে গেলেও, রাত্তির না বদলালেও। বাবা শেখেনি উড়ান, আমিও শিখিনি। শোনাটা কেবল কানে কানে মুখে মুখে চোখে চোখে সরু অলিগলি কিংবা আলপথ হয়ে আমাদের মধ্যে। ভেতরবাড়িতে হাজির। ভেতরবাড়িটা কখনও, কখন দ্যাশবাড়ি হয় আবার। একটা গল্প সকলে জানে ডানা ভাঙার। ভেঙেছিল এক গাঙচিলের। বাংলার পুব হতে সে অতিদূর কোনো কলিকাতা এসেছিল উড়ে উড়ে। বা কলিকাতা থেকে কোথাও কামরূপ-কামতাপুর গেছিল উড়ে উড়ে। এমতন কত উড়ান। কোথা থেকে কোথায় যায় কে। আবার একাধিকটা গল্প জানিনা ডানার, আর তার চিলের। কেউ কেউ। যেমন চিলা রায়। সেও আছিল এক চিল। যেমন পরি। পরিরা নাকি রাজা-রাষ্ট্র-রাক্ষস ইত্যাদির গড়া সীমান্ত পেরতে গিয়ে নিয়ত তাদের ডানা খোয়ায়।........