Thursday, January 13, 2022

ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান।

|| 'ব্লিডিং বরষে হৃদি'র পাঠ-প্রতিক্রিয়া। কথায় কবি ওয়াহিদার হোসেন ||

ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান। 



ব্লিডিং বরষে হৃদি। এক রক্তাক্ত হৃদয়ের উপাখ্যান। বমিসম্ভুত এক কাব্য। অনর্গল বিষাদ গলাধঃকরণের যেন ফলাফল এই কবিতা সমূহ রাশি। উৎসর্গ করা হয়েছে রু কে তিনি রা নামের সূয্যি দেবের কন্যা, স্ত্রী ফারহানা মানে আনন্দময়ী আর শেফালী এবং চৈতি। উৎসর্গ পত্রেও চূড়ান্ত রকমের ব্যতিক্রমী উদযাপন। হুবহু পড়তে গেলে বইটি কিনে পড়তে হবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই এই বই ব্যতিক্রমী তাই স্বাদে মানে স্বোয়াদে একদম রাহেবুলীয় এক গাথা।

 

কবিতাগুলি ভিন্ন ভিন্ন সময়ে লেখা হয়েছে। ‘ঘূর্ণন দেখছি’র শেষ টা এখানে শুরু হয়েছে। সে এক বিজ্ঞাপন আগামী কাব্যির। কবিতাগুলি দু’হাজার উনিশের লেখা।

দ্বিতীয় কবিতা— ‘এইভাবে/এই ভবে/ব্ল্যার/ব্লেডজ কুসুম’

(এই বই পড়ুন ব্লেডজ কুসুম) ভুল করবেন না ‘ক্লেদজ কুসুম’ বলে। ইনি বোদলেয়ার নন আমাদের প্রিয় কবি যিনি প্রথম কবিতায় আমাদের রক্তাক্ত করেন দুমুখি ধারালো এক ব্লেডে।

দুই প্রেমিক প্রেমিকা অনুহ্য থেকেছে। তাদের সংলাপ বিরচিত হয়েছে। কি অসাধারণ কাব্যগুণ—

ঘুম হয়েছে?

না।

ঘুম হয়েছে?

না।

ঘুম হয়েছে কাল?

না।

ঘুমিয়েছ কাল?

ততটা ভালো নয়।”

এরপর চলতেই থাকে দীর্ঘ কবিতাটি।

সাদা পরির সম্মোহন

 

অথবা

 

সেক্সচ্যাট

 

অথবা

 

ব্লেডজ মায়া”

এই হচ্ছে রাহেবুলীয় প্রেমের সংজ্ঞা। যেখানে প্রেম নিয়ে কবিকল্পনা নেই। ঝর্ণা নেই। আছে শুধু শরীরি উত্তাপ আর চূড়ান্ত ভোগবাদী এক প্রজন্মের তুমুল সেক্সচ্যাট। যা স্বাভাবিক। রিয়েল এক পৃথিবীর ছবি তুলে ধরে যেখানে ভোর নেই শুধু ঘুমহীন অনন্তরাত।

একসময় রাষ্ট্র সমাজের পচন উঠে আসে কবি নিশ্চিন্ত স্বাভাবিক উচ্চারণ করেন—

খাপ বসেছে ঘুমের নৈরাজ্যে। ঘুমের বীচিগুলান কেমন আমাছামা লাগে...কেমন ব্ল্যার… কীসব টক্সিসিটি, একসময় নিন্দালু হই।”

ক্লান্ত হতে হতেও কবি আমাদের শেষ ক’টি লাইনে আমাদের সমাজ সভ্যতার ‘ব্ল্যার’ ‘আমাছামা’ অংশটি তুলে ধরে আমাদের নিয়তি দেখিয়ে দেন অথবা সময়সচেতন কবি এখানেই নিস্তব্ধতার গান ফাঁদেন—

ডাংঘড়ির কাটা যেন।

বলে-

পাগলা গারদে কবে যাবি?”

 

ভাষা, শব্দ নির্বাচনে কবি নির্মোহ। দেশীয় রাজবংশী শব্দ অবলীলায় ব্যবহার করেছেন। কবির তির্যক প্রতিবাদ সীমানা অতিক্রম করে আন্তর্জাতিকতার সীমানাও পেরিয়ে গেছে। সমগ্র মানব সমাজ মানচিত্র হয়ে উঠেছে ব্যঙ্গের বিষাদের লক্ষ্যস্থ্ল এবং কারণ—

উলঙ্গরা রাজা, রাজপাট তাহাদের।”

আবার অন্য কবিতায়—

ডান্ডায় বাধা ঝাণ্ডাগুলান সমস্বরে বলে উঠলো: ইনকিলাব

কতেক রামাল্লাহ্‌ আগের মতোই বোবাকালাকানা রহিলেন

পাড়ার গুণ্ডা শুধালো: বাঞ্চোত! শাসকই সময়!”

 

শব্দের স্ফুরণ। অগ্নি। যা ক্রমাগত জ্বালিয়ে গেছে আমাকে। কবিতা পড়তে পড়তে বইটা বহুবার বন্ধ করে বুঝেছি এ আসলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনা করার মতো যে এখুনি হয়তো বাথরুম থেকে ফিরে এসে নিজের ধোওয়া আধাধোওয়া প্রত্যেক্টি অংশ পচন দেখতে পাচ্ছে তাকে তুলে ধরছে শব্দ বাক্য কখনো নৈশব্দ্যঃ কখনো আবার স্পেসের মাধ্যমে। বস এই কবিতাগুলি পড়তে গেলে সাহস লাগবে। আর হ্যাঁ এই কবিতা হয় রাস্তায় পাগলের মতো দাঁড়িয়ে থুতু ছিটিয়ে সমাজ সভ্যতার ধর্মের গায় পাঠ করতে পারেন, হবে নতুবা চুপ করে আত্মস্থবির হয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য এই বইয়ে আরও দু’টো গদ্য রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আরও দীর্ঘ পরিসরের প্রয়োজন। আর হ্যাঁ বইটি বুকসেল্ফে রাখার জন্য নয়। যারা ব্যাতিক্রমী লেখা পড়েন তারা অবশ্যই সংগ্রহ করুন। আর হ্যাঁ বইটি আমাদের উপহার দিয়েছেন প্রকাশক আমাদেরই ভাইবেরাদর সুকান্ত দাস।

 

কবিতার প্রচ্ছদ খুব সুন্দর। করেছেন কৃষ্ণেন্দু নাগ।

প্রচ্ছদের রূপটান সুপ্রসন্ন কুণ্ডুর।

মূল্য আশি টাকা।

প্রকাশক শাঙ্খিক।

 


No comments:

Post a Comment